রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোনো মূল্যে ২০২৫ সালের মধ্যে সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। আগামী এক বছরের মধ্যে দলটি নির্বাচন আদায়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে সব চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। মাঠে নির্বাচনের বাইরে অন্য কোনো ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে না তোলার পরিকল্পনা করছে তারা। শরিকরাও বিএনপির সুরে নির্বাচনের কথা বলবে। মাস দুয়েক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে মাঠে কর্মসূচি দেবে দলটি।
শনিবার গুলশানে বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশ নেন। প্রথমে ১২ দলীয় জোট, এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিয়াজোঁ কমিটি প্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নেতৃত্ব দেন। সমমনাসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্তত ৫০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালানো এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ভেঙে পড়ায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয় একরকম নিশ্চিত। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের সব ইউনিট চাঙ্গা। নির্বাচন দেরি হলে তাদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি মিলে নতুন যে রাজনৈতিক দল হচ্ছে; এতে রাজনীতির সমীকরণ ভিন্ন হতে পারে। নির্বাচন দেরি হলে বি-রাজনীতির একটি শঙ্কাও কাজ করছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। সবকিছু মাথায় রেখে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আদায় করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে তারা সব শরিক ও সমমনা দলকে মাঠে নামাতে চায়। এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে জনগণের আওয়াজ বাড়াতে চায়। বিএনপির বোঝাতে চাইবে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন দেখতে চায়। রাজনতিবিদ ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে এক করতে চায় বিএনপি। পেশাজীবীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচন আয়োজনের যৌক্তিকতা তুলে ধরবে।
শুরু থেকেই দ্রুত সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে জামায়াতসহ অন্য অনেক দলের দ্রুত নির্বাচনে তেমন আগ্রহ নেই। সংস্কারকেই গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছেন, এতে অন্যরা স্বাগত জানালেও বিএনপি বলছে, অস্পষ্টতা কাটেনি। অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটানো ছাত্র নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন হতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনেরও অগ্রাধিকারে রয়েছে সংস্কার। এমনকি তাদের দাবি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন।
গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জমান ফরহাদ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে জনমত গড়ে তুলব। মানুষের কাছে যাব। লিফলেট বিলি করব, সরকারের কাছে আবেদন জানাব, মিছিল মিটিং করব; ক্রমান্বয়ে বড় কর্মসূচিতে যাব। প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেস সচিবের দুই ধরনের বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ আলাদা দল গঠনের চেষ্টা করছেন-এটি আমরা ভালো চোখে দেখছি না। মানুষের ধারণা এগুলো কিংস পার্টিই হবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা আমরা সবাই ২০২৫ সালের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন চাই এবং তাই হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কথা যাতে বাস্তবায়ন হয়ে সেদিকে মনোযোগ দিব আমরা। তার কথায় আস্থা রাখতে চাই। নির্বাচন এই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আদায়ের জন্য আমরা মাঠে কিছু কাজ তো করবই। কর্মসূচি আসবে। মিটিং, সেমিনার, টকশো সবখানে নির্বাচনকে গুরুত্ব দিতে চাই। মানুষ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি; তাদের ভোটাধিকার যত দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া যায় সরকারের জন্য ততই ভালো। তিনি জানান, বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা একটি পক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করতে ওঁৎ পেতে আছে। বিএনপি যুগপৎ সবার সঙ্গে বৈঠক শেষে ফোরামে আলোচনা করে বিস্তারিত জানাবেন। জোটের নেতা রাশেদ প্রধান বলেন, বৈঠকে আমরা নির্বাচন যাতে আগামী বছরের মধ্যে হয় সে বিষয়ে কাজ করতে একমত হয়েছি। এ জন্য আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। মনে করতে চাই না নির্বাচন আদায়ের জন্য তাদেরকে বাধ্য করতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, বিএনপিসহ তারা সবাই আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চান। রোডম্যাপের জন্য সময় বেঁধে দেবেন এবং তা প্রধান উপদেষ্টার মুখ দিয়ে ঘোষণা করতে হবে। ঘোষণা না হলে ফেব্রুয়ারিতে কিছু কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন। এর সঙ্গে যোগ হবে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু দাবি-দাওয়া।
বৈঠক শেষে দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। ১২ দলীয় জোট ও বিএনপি এবং দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলন করে এসেছে- আমাদের সেই আন্দোলন এবং লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। আগামীতে সেটা আরও গভীর হবে। আমরা বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে অতীতের মতো আমাদের কর্মসূচি আপনাদের সামনে আনব। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা আমরা জানাব।